Skip to main content

Farewell Hajj Bangla | বিদায় হজ্জ বিদায় হজ্জের ভাষণ সম্পূর্ণ বিদায় হজ্বের ভাষণের তাৎপর্য

বিদায় হজ্জ বিদায় হজ্জের ভাষণ সম্পূর্ণ বিদায় হজ্বের ভাষণের তাৎপর্য   বিদায় হজ্জ

দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ পূর্ণ হয়েছে। আল্লাহর রবুবিয়ত এবং অন্য সকল মতাদর্শের বিলোপ সাধন করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেন রেসালতের ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ গঠন করা হয়েছে। এরপর যেন অদৃশ্য ঘোষক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিন্ত ও চেতনার এ ধারণা বদ্ধমূল করেছিলো যে, পথিবীতে তাঁর অবস্থানের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে।

বিদায় হজ্জের ভাষণ সম্পূর্ণ বিদায় হজ্জ  বিদায় হজ্বের ভাষণের তাৎপর্য

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মায়া’য (রা.)-কে ইয়েমেনের গভর্নর নিযুক্ত করে প্রেরণ করার সময় অন্যান্য প্রয়োজনীয় কথার পর বললেন, হে মায়া’য সম্ভবত এই বছরের পর আমার সাথে তোমার আর সাক্ষাৎ আর হবে না। হয়তো এরপর তুমি আমার মসজিদ এবং কবরের কাছে দিয়ে অতিক্রম করবে। হযরত মায়া’য (রা.) একথা শুনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিরবিদায়ের কথা ভেবে কাঁদতে শুরু করলেন।

প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালা চাচ্ছিলেন যে, তাঁর রসূলকে দীর্ঘ বিশ বছরের দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনের সুফল প্রত্যক্ষ করাবেন। হজ্জের সময় মক্কার বিভিন্ন এলাকা থেকে জনসাধারণ এবং জন প্রতিনিধিদলল মক্কায় সমবেত হবেন এরপর তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে শরীয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাছ থেকে এ মর্মে সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন যে, আমি আমার ওপর অর্পিত আমানত পূর্ণ করেছি, আল্লাহর পয়গাম মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি এবং উম্মতের কল্যাণের হক আদায় করেছি।

আল্লাহর এইরূপ ইচ্ছা অনুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে ঐতিহাসিক হজ্জের তারিখ ঘোষণা করলেন তখন নির্দিষ্ট দিনে দলে দলে মুসলমান মক্কায় পৌঁছুতে শুরু করলেন। সমবেত সকলেই মনে-প্রাণে চাচ্ছিলেন যে, তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ গ্রহণ করে তাঁর আনুগত্য মেনে নেবেন।

 [1]
অতপর শনিবার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার পথে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। যিলকদ মাসের তখনো চারদিন বাকি ছিলো।

 [2]
তিনি মাথায় তেল দিলেন, চুল আঁচড়ালেন. তহবন্দ পরেলেন,চাদর গায়ে জড়ালেন, কোরবানীর পশুকে সজ্জিত করলেন এবং যোহরের পর রওয়ানা হলেন। আছরের আগেই তিনি যল হুলাইফা নামক জায়গায় পৌঁছুলেন। সেখানে আছরের দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। রাত যাপনের জন্যে তাঁবু স্থাপন করলেন। সেখানে রাত কাটালেন। সকালে তিনি সাহাবাদের বললেন, রাতে আমার পরওয়াদেগারের কাছ থেকে একজন আগন্তুক এসে বলেছে, হে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই পবিত্র প্রান্তরে নামায আদায় করুন এবং বলুন যে, হজ্জের মধ্যে ওমরাহ রয়েছে। 

[3]
এরপর যোহর নামাযের আগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এহরামের জন্যে গোসল করলেন। হযরত আয়েশ (রা.) নিজ হাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র দেহে জারিরা ও মেশক খুশবু লাগালেন। খুশবুর চমক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সিথি এবং পবিত্র দাড়িতে দেখা যাচ্ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই খুশবু ধৌত করেননি। যেমন ছিলো তেমনই রেখে দিলেন।

এরপর তিনি তহবন্দ চাদর পরিধান করলেন। যোহরের দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। পরে মোসল্লায় বসেই হজ্জ এবং ওমরাহর একত্রে এহরাম বেঁধে লাব্বায়েক আওয়াজ দিয়ে বাইরে এলেন। পরে উটনীতে আরোহণ করে দু’বার লাব্বায়েক বললেন। উটনীতে চড়ে খোলা ময়দানে গিয়ে সেখানেও লাব্বায়েক ধ্বনি দিলেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরপর তাঁর সফর অব্যাহত রাখলেন। এক সপ্তাহ পর তিনি এক বিকেলে মক্কার কাছে পৌঁছে যি-তুবা নামক জায়গায় অবস্থান করলেন এবং ফজরের নামায আদয়ের পর গোসল করলেন। এরপর মক্কায় প্রবেশ করলেন। সেদিন ছিলে দশম হিজরীর যিলহজ্জ মাসের চার তারিখ রোববার। মদীনা থেকে রওয়ানা হওয়ার পর পথে আট রাত অতিবাহিত হয়েছিলো।

স্বাভাবিক গতিতে পথ চললে এরূপ সময়ই প্রয়োজন হয়। মসজিদে হারামে পৌঁছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে কাবাঘর তওয়াফ করেন। এরপর সাফা মারওয়ার মধ্যবর্তী জায়গায় সাঈ করেন। কিন্তু এহরাম খোলেননি। কেননা তিনি হজ্জ ও ওমরাহর এহরাম একত্রে বেঁধেছিলেন।

নিজের সাথে কোরবানীর পশুও নিয়ে এনেছিলেন। তওয়াফ এবং সাঈ শেষে তিনি মক্কার হাজ্জন নামক স্থানে অবস্থান করেন। কিন্তু দ্বিয়ীয় হজ্জের তওয়াফ ছাড়া কোন তওয়াফ করেননি।

যিলহজ্জ মাসের আট তারিখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিনায় গমন করলেন। সেখানে ৯ই যিলহজ্জ তারিখ পর্যন্ত অবস্থান করলেন। যোহর, আছর, মাগরিব, এশা এবং ফযর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায সেখানে আদায় করে সেখানে সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। পরে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। সেখানে পৌঁছে দেখে নেমরাহ প্রান্তরে তাঁবু প্রস্তুত রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপবেশন কররলেন। সূর্য ঢলে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ উটনীর পিঠে আসন লাগানো হলো।

তিনি প্রান্তরের মাঝামাঝি স্থানে গমন করলেন। সেই সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারিদিকে এক লাখ চব্বিশ হাজার মতান্তরে এক লাখ চুয়াল্লিশ হাজার মানুষের সমুদ্র বিদ্যামন ছিলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জেসমবেত জনসমুদ্রের উদ্দেশে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।

তিনি বলেন,‘ হে লোক সকল, আমার কথা শোনো, আমার কথা শোনো, আমি জানি না, এবারের পর তোমাদের সাথে এই জায়গায় আর মিলিত হতে পারবো কি না।’ 

[4]
তোমাদের রক্ত এবং ধন-সম্পদ পরস্পরের জন্যে আজকের দিন, বর্তমান মাস এবং বর্তমান শহরের মতোই নিষিদ্ধ। শোনো, জাহেলিয়াতের সময়ের সবকিছু আমার পদতলে পিষ্ট করা হয়েছে। জাহেলিয়াতের খুন ও খতম করে দেয়া হয়েছে। আমাদের মধ্যেকার যে প্রথম রক্ত আমি শেষ করছি তা হচ্ছে, রবিয় ইবনে হারেসের পুত্রের রক্ত।

এই শিশু বনি সা’দ গোত্রে দুধ পান করছিলো সেই সময়ে হোযাইল গোত্রের লেকেরা তাকে হত্যা করে। জাহেলী যুগের সুদ খতম করে দেয়া হয়েছে। আমাদের মধ্যকার প্রথম যে সুদ আমি খতম করছি তা হচ্ছে আব্বাস ইবনে আবদুল মোত্তালেবের সুদ। এখন থেকে সকল প্রকার সুদ শেষ করে দেয়া হলো।

মেয়েদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আামনতের সাথে গ্রহণ করেছে এবং আল্লহর কালেমার মাধ্যমে হালাল করেছ। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার রয়েছে যে, তারা তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে আসতে দেবে না যাদের তোমরা পছন্দ করো না। যদি তারা এরূপ করে তবে তোমারা তাদের প্রহার করতে পারো। কিন্তু বেশী কঠোরভাবে প্রহার করো না। তোমদের ওপর তাদের অধিকার হচ্ছে এই যে, তোমরা তাদের ভালোভাবে পানাহার করাবে এবং পোশাক দেবে।

তোমাদের কাছে আমি এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি যে, যদি তোমর তা দৃঢ়ভাবে ধারন করে থাকো তবে এরপর কখানো পথভ্রষ্ট হবে না। সেই জিনিস হচ্ছে আল্লাহর কেতাব। 


[5]
হে লোক সকল মনে রেখো আমার পরে কোন নবী নেই। তোমদের পরে কোন উম্মত নেই। কাজেই নিজ প্রতিপালকের এবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে। রমযান মাসে রোযা রাখবে। সানন্দ চিত্তে নিজের ধন-সম্পদের যাকাত দেবে। নিজ পরওয়ারদেগারের ঘরে হজ্জ করবে। নিজের শাককদের আনুগত্য করবে। যদি এরূপ করো তবে তোমাদের পরওয়ারদেগারের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। 

[6]
তোমাদরে সাথে আমার সম্পর্কের ব্যাপারে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমরা তথন কি বলবে? সাহবারা বললেন, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি তাবলীগ করেছেন, পয়গাম পৌঁছে দিয়েছেন। কল্যাণকারিতার ব্যাপারে ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।

একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাহাদাত আঙ্গুল আকাশের দিকে তুলে এরপর লোকদের দিকে ঝুঁকিয়ে তিনবার বললেন, ইয়া রাব্বুল আলামীন, তুমি সাক্ষী থেকো। 

[7]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বানীসমূহ রবিয়া ইবনে উামইয়া ইবনে খালফ উচ্চকন্ঠে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিলেন।

[8]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণ শেষ করার পর আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের এই আয়াত নাযিল করেন।

‘আজ তোমদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদরে দ্বীন মনোনীত করলাম।’(সূরা মায়েদা,আয়াত -৩)

হযরত ওমর (রা.) এই আয়াত শুনে কাঁদতে শুরু করেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বলেন, কাঁদছি এ জন্যে যে, পূর্ণতার পর অপূর্ণতাই শুধু বাকি থাকে।

[9]
নবী করিমের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণের হযরত বেলাল (রা.) আযান ও একামত দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যোহরের নামাজ পড়ালেন। এরপর হযরত বেলাল একামত দিলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছরের নামাজ পড়ালেন। সেখানে তিনি উটনীর পিঠেই অপেক্ষা করলেন, কিছুক্ষণ পর সূর্যাস্ত হলো।

এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উসামাকে (রা.) পেছনে বসালেন এবং সেখানে থেকে রওয়ান হয়ে মোযদালেফা গমন করলেন। সেখানে মাগরেব ও এশার নামায এক আযানের দুই একামতে আদায় করলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম শয়ন করলেন।

ফজরের নামাযের সময় হওয়া পর্যন্ত তিনি শায়িত থাকলেন। ফজরের সময় হওয়ার পর আযান ও একামতের সাথে ফজরের নামায আদায় করলেন। এরপর উটনীতে সওয়ার হয়ে ‘মাশআরে হারামে’ গমন করে কেবলার দিকে ফিরে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আল্লাহর নামে তাকবীর ধ্বনি দিলেন এবং তওহীদের কালেমা উচ্চারণ করলেন। সেখানে সকালে চারিদকে ভালোভাবে ফর্সা হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করলেন। এরপর সূর্য ওঠার আগে আগেই মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। এবার হযরত ফযল ইবনে আব্বাসকে নিজের পেছনে বসালেন।

‘বাৎনে মোহচ্ছার’ (আবরাহার সৈন্যদের ওপর গযব আসার জায়গায়) পৌঁছে সওয়ারীকে জোর ছোটালেন। জামরায়ে কোবরার পথে রওানা হয়ে সেখানে পৌঁছুলেন। এর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করেন। প্রতিবারের পাথর নিক্ষেপের সময় তিনি তাকবির ধ্বনি দিচ্ছিলেন। ছোট ছোট পাথরের টুকরো ছিলো সেগুলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে এসব পাথর নিক্ষেপ করেন।

এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বধ্যভূমিতে গমন করে তাঁর পবিত্র হাতে ৬৩টি উট যবাই করেন। এরপর বাকি ৩৭টি উট হযরত আলী (রা.)-কে যবাই করতে দেয়া হয়। এভাবে একশত উট কোরবানী করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলীকেও তাঁর কোরবানীর মধ্যে শামিল করে নেন।

তাঁর আদেশে প্রত্যেক উট থেকে এক টুকরো করে গোশত নিয়ে একটি হাড়িতে রান্না করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আলী সেই গোশত কিছু আহার করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু সুরুয়াও পান করেন।

এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ারীতে আরোহণ করে মক্কা মোয়াযযমায় গমন করলেন। বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করলেন। এই তওয়াফকে বলা হয় তওয়াফে এফাযা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় যোহরের নামায আদায় করলেন। যমযক কূপের কাছে বনু আবদুল মোত্তালেবের কাছে গমন করলেন। তারা হাজীদের যমযমের পানি পান করাচ্ছিলেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে বনু আবদুল মোত্তালেব তোমরা পানি উত্তোলন করো। যদি এ আশঙ্কা পোষণ না করতাম যে পানি উত্তোলনের কাজে অন্য লোকেরা তোমাদরে পরাজিত করে দেবে তবে আমিও তোমাদরে সাথে পানি উত্তোলন করতাম। অর্থাৎ সাহাবারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পানি তুলতে দেখলে সবাই পানি তোলার জন্যে চেষ্টা করবেন।

এর ফলে হাজীদের পানি পান করানোর যে গৌরব এককভাবে বনু আবদুল মোত্তালেবের রয়েছে তা আর থাকবে না। অতপর বনু আবদুল মোত্তালেবের লোকেরা নবী (রা.)-কে এক বালতি পানি দিল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই পানি প্রয়োজন মতো পান করলেন। 


[10]
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আইয়ামে তাশরীক অর্থাৎ ১১,১২, ও ১৩ই যিলহজ্জ তারিখে মিনায় অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি হজ্জের রীতিসমূহও পালন করছিলেন। সেই সাথে জনসাধারণকে শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও শিক্ষা দিচ্ছিলেন। আল্লাহর যেকেরও করছিলেন। মিল্লাতে ইবরাহীমের সুন্নতসমূহেও কায়েম করছিলেন। শেরেকের নিদর্শনসমূহ নির্মূল করছিলেন।

সর্বশেষ সামরিক অভিযান:

সুবিস্তৃত রোমক সাম্রাজ্যের শাসকবর্গ ইসলাম এবং ইসলাম গ্রহণকারীদের বেঁচে থাকার অধিকার মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলো না। এ কারণে রোমক সাম্রাজ্যের নিয়নিন্ত্রত এলাকার কারো ইসলাম গ্রহণ করা ছিলো বিপজ্জনক। রোমক সাম্রাজের শসকদের ঔদ্ধত্য এবং অহঙ্কারপূর্ণ আচরণের প্রেক্ষিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাদশ হিজরীর সফর মাসে এক বিরাট বাহিনী তৈরীর কাজ শুর করলেন।

হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রা.)-কে সেই বাহিনীর সিপাহসালার নিযুক্ত করে তিনি আদেশ দিনলেন যে, বালকা এলাকা এবং দারুমের ফিলিস্তিনি ভূখন্ড সওয়ারদের মাধ্যমে নাস্তানাবুদ করে এসো। রোমকদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে করে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাসকারী আরব গোত্রসমূহের মনে সাহস সঞ্চার করাই ছিলো এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য। এর ফলে কেউ একথা ভাবতে পারবে না যে, গীর্জার বাড়াবাড়ি ও স্বেচ্ছাচারিতার সামনে কথা বলার কেউ নেই। তাছাড়া একথাও কেউ মনে করতে পারবে না যে, ইসলাম গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে নিজের মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানানো।

হযরত উসামা (রা.)-কে সেনাপতি নিযুক্ত করার কেউ কেউ সমালোচনা করে এ অভিযানের প্রস্তুতিও অংশগ্রহণে ইতস্তত করলেন। এ অবস্থা করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা যদি উসামার সেনাপতিত্বের প্রশ্নে সমালোচনা মুখর হও তবে তো বলতেই হয় যে, ইতিপূর্বে তার পিতাকে সেনাপতি নিযুক্ত করায় তোমরা সমালোচনা মুখর হয়েছিলো।

অথচ আল্লাহর শপথ, যায়েদ ছিলো সেনাপতি হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন। এছাড়া সে ছিলো আমার প্রিয় ভাজনদের অন্যতম। উসামাও যায়েদের পর আমার প্রিয় ভাজনদের অন্যতম। 


[11]
তখন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) হযরত উসামা (রা.)-এর আশপাশে সমবেত হয়ে তার সেনাবাহিনীতে শামিল হলেন। এই সেনাবাহিনী রওয়ানা হয়ে মদীনা থেকে তিন মাইল দূরে মাকামে যরফ নামক স্থানে গ্রহণ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসুখ সম্পর্কে উদ্বেগজনক খবর পেতে থাকায় তারা সামনে অগ্রসর হননি। আল্লাহর ফয়সালার অপেক্ষায় তারা সেখানেই অপেক্ষা করতে লাগলেন। আল্লাহর ফয়সালা ছিলো এই যে, হযরত আবু বরক ছিদ্দিক (রা.)-এর খেলাফতের প্রথম সামরিক অভিযান হিসাবে এটি আখ্যায়িত হবে।

[12]

বিদায় হজ্জের ভাষণ হাদিস


ফুটনোট:

[এই হাদীস সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে। দ্রষ্টব্য প্রথম খন্ড,পৃ=৩৯৪, হুজ্জাতুল নবী অধ্যায়।]

[হাফেজ ইবনে হাজর এ ব্যাপারে চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন। কোন কোন বর্ণনায় জিলকদ মাসের ৫ দিন বাকি থাকার যে কথা রয়েছে তা সংশোধন করেছেন।দ্রষ্টব্য ফতহুল বারী, ৮ম খন্ড, পৃ-২০৭।]

[রোখারী শরীফে হযরত ওমর (রা.) থেকে এই বর্ণনা সঙ্কলিত হয়েছে। ১ম খন্ড, পৃ-২০৭]

[ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড,পৃ-৬০৩]

[সহীহ মুসলিম, হুজ্জতুল নবী অধ্যায়।১ম খন্ড, পৃ-৩৯৭]

[ইবনে মাজা, ইবনে আসাকের, রহমতুল লিল আলমিন,১ম খন্ড, পৃ-২৬৩]

[সহীহ মুসরিম, ১ম খন্ড, পৃ-৩৯৭]

[ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড, পৃ-৬০৫]

[বোখারী, ইবনে ওমরের (রা.) বর্ণনা দ্রষ্টব্য। ১ম খন্ড, পৃ-২৬৫]

[মুসলিম শরীফে ও হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে। হুজ্জাতুন নবী অধ্যায়, ১ম খন্ড, পৃ-৩৯৭-৪০০]

[সহীহ বোখারী, উসামাকে প্রেরণ অধ্যায়, উসামা ২য় খন্ড, পৃ-৬১২]

[সহীহ বোখারী, এবং ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড, পৃ-৬০৬-৬৫০]।

Comments

Popular posts from this blog

6 Kalima in Bangla ortho o Uccharan Shoho | ৬ কালেমা বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ সহ

৬ কালেমা বাংলা উচ্চারণ  6 Kalima কালিমা সমূহ  ৬ কলিমা আরবী ও বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ এবং ঈমান-ই মুজমাল  ঈমান-ই মুজমাল সহ চলুন জেনে নেই 6 Kalima in Bangla(Bengali) ortho o Uccharan Shoho ৬ কালেমা বাংলা উচ্চারণ  সহ ইসলামিক সব গরুত্ব পর্ণ দুআ ও আমল সমূহ, এবং নবীদের জীবনী, ইসলামিক যুদ্ধের কাহিনী, জানতে আমাদের আপ্প  ডাউনলোড করুন Download App Now কালেমা কয়টি ও কি কি  কালিমা ৬ টি   (1) কালেমা-ই তাইয়্যেবা   (2). কালেমা-ই শাহাদৎ  (3)  কালেমা-ই তাওহীদ  (4.) কালেমা-ই রদ্দেকুফর  (5). কালিমা-ই তামজীদ  (6.) কালিমা আস্তাগফার ৬ কালেমা বাংলা উচ্চারণ 6 kalima in bangla 1. কালেমা-ই তাইয়্যেবা   بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ  لَا اِلَهَ اِلاَّ اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْ لُ الله  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।  কালিমা তায়্যিবা বাংলা উচ্চারণ  Kalima Tayyiba Bangla লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ । কালিমা তায়্যিবা অর্থ  আল্লাহ ব...

শীর্ষ 6 টি উপায় অনলাইন থেকে টাকা আয় করার সহজ ও সঠিক উপায় | Top 6 Way Online Theke Taka Income Korar

কিভাবে অনলাইন থেকে সঠিক উপায়ে ও সহজে টাকা ইনকাম করা যায় শীর্ষ 6 টি উপায় Kivabe Taka income Korbo  Kivabe Taka income Korbo  Best Way Online Theke Taka Income Korar  অনলাইন ইনকাম অনলাইন থেকে কিভাবে সহজে টাকা  ইনকাম করা যায় অথবা অনলাইনে কিভাবে টাকা  আয় করা যায় এ ধরনের প্রশ্নগুলো বেশির ভাগ করা হয়ে থাকে ইন্টারনেটে। আপনি যখন এখানে এসেছেন তাহলে অবশ্যই আপনি নতুন এবং আপনি অনলাইন থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় সেটা জানতে চাচ্ছেন। অথবা শিখতে চাচ্ছেন তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আপনাকে সঠিকভাবে গাইড করা। আপনি যদি মনে করে থাকেন যে আপনাকে কোন মোবাইলের অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার লিংক দেওয়া হবে। অথবা ওয়েবসাইটের লিংক দেওয়া হবে কাজ করার জন্য এবং সেটা থেকে আপনি 500 টাকা অথবা 1000 টাকা দৈনিক ইনকাম করবেন বিকাশে পেমেন্ট নেবেন তাহলে আপনি ভুল জায়গায়  চলে এসেছেন।  আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে আপনাকে হতাশ করা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই  তবে যদি আপনি সমস্ত আর্টিকেলটা পড়েন তাহলে আশাকরি আপনার যত ভুল ধারণা আছে সেই সবগুলো আর থাকবে ন...

আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ ফজিলত | Allah 99 Name Bangla With Meaning And benefits in Bangla

  আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ ফজিলত, আল্লাহর নামসমূহ এর ফজিলত ও গুণাবলী আলোচনা করাহলো বিস্তারিত ভাবে আল্লাহর ৯৯ টি নামের সটিক হাদিস এর আলোকে আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা  আল্লাহর ৯৯ টি নামের আমল ও ফজিলত আল্লাহর ৯৯ টি নামের আমল ও ফজিলত সহ ইসলামিক সব গরুত্ব পর্ণ দুআ ও আমল সমূহ, এবং নবীদের জীবনী, ইসলামিক যুদ্ধের কাহিনী, জানতে আমাদের আপ্প  ডাউনলোড করুন Download App Now আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ ফজিলত  (১). ইয়া আল্লাহ ★★★ ফজিলত ★★★: যে ব্যক্তি রোজ এক হাজার বার ‘ইয়া আল্লাহ! পাঠ করবে, ইনশাআল্লাহ তার মন থেকে যাবতীয় সন্দেহ ও দ্বিধা দূরীভূত হয়ে যাবে এবং সে একীন ও দৃঢ়তা অর্জন করতে পারবে। কোন দূরারোগ্য রোগী যদি অত্যাধিক পরিমাণে ‘ইয়া আল্লাহ’ নিয়মিত পড়তে থাকে এবং পরে আরোগ্যের জন্য দোয়া করে, তা হলে সে আরোগ্য লাভ করবে। (২). আররাহমানু = নামের অর্থ - অসীম দয়ালু ★★★ ফজিলত ★★★:★★★ প্রত্যহ প্রতি নামাযের পরে একশ’বার এই নাম পাঠ করলে মন থেকে যাবতীয় কাঠিন্য ও অলসতা দূর হয়ে যাবে। (৩). আর-রাহীমু = নামের অর্থ - বড় মেহেরবান ★★★ ফজিলত ★★★ কেউ এ নাম প্রত্যহ নামাযান্তে একশ বার পাঠ করলে দুনিয়ার সমস্ত আপ...