Durood Sharif in Bangla | দরুদ শরীফের ফায়দা ফজিলত রাসূল (সাঃ) কে স্বপ্নে দেখার আমল ও নবীজির দুরুদ শরীফ
রাসূল সা কে স্বপ্নে দেখার আমল রাসুল সা কে স্বপ্নে দেখার ফজিলত নবী (সাঃ)কে স্বপ্নে দেখলে কি হয় প্রিয় নবীকে স্বপ্নে দেখার আমল
দুরুদ শরীফ বাংলা নবীজির দুরুদ শরীফ সবগুলো দরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ দুরুদ শরীফ আরবি ছোট দরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ দরুদ শরীফের ফায়দা: ফজিলত
প্রিয় নবীকে স্বপ্নে দেখার আমল
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কেননা বিতাড়িত শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যাচার করল, সে তার দোজখের আসন গ্রহণ করল। ’ –সহিহ বোখারি : ১১০
অন্য আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, শিগগিরই সে আমাকে জাগরণে দেখবে অথবা সে যেন আমাকে জাগরণেই দেখল। আর শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না।’ –সহিহ মুসলিম : ২২৬৬
ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় যে, অনেক সাহাবি, তাবেঈ ও বুজুর্গরা নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন। ইসলামের বিধান হলো, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা বাস্তবে দেখার মতো। কেননা, শয়তান কখনও নবীজির আকৃতি ধারণ করতে পারে না।
এখন আমাদের জানা দরকার, নবী করিম (সা.) কেমন ছিলেন তিনি। কোন আকৃতিতে তাকে স্বপ্নে দেখা যাবে। শামায়েলে তিরমিজির বর্ণনায় নবী করিম (সা.)-এর আকার-আকৃতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে—
তিনি ছিলেন মানানসই দীর্ঘদেহি। তার গায়ের রঙ দুধে-আলতায় মিশ্রিত গোলাপের মতো। গোলগাল হালকা-পাতলা চেহারা। ঘন দাড়ি। মুখগহবর প্রশস্ত। ঘাড় যেন রৌপ্যপাত্রে রক্তঢালা। কেশরাশি সামান্য কোঁকড়ানো-বাবরি। মেদহীন সুঠাম দেহ। হাত-পায়ের আঙুলগুলো শক্তিশালী ও মজবুত।
বাহু, কাঁধ ও বুকের ওপরে পশমবিশিষ্ট। অতিরিক্ত পশমমুক্ত শরীর। বুকে নাভি পর্যন্ত পশমের দীর্ঘ রেখা। দুই কাঁধের মাঝখানে মোহরে নবুওয়ত। মাথা ও অস্থিবন্ধনীগুলো কিছুটা বড়সড়। প্রশস্ত ললাট। চক্ষুগোলক ডাগর ডাগর। চোখের মণি কুচকুচে কালো। পাপড়ি লম্বাটে। ভ্রুযুগল অমিলিত প্রশস্ত ঘন।
ভ্রুদ্বয়ের মাঝখানে প্রস্ফুটিত একটা রগ, যা রাগের সময় স্ফীত হতো। উন্নত চকচকে নাসিকা। দাঁতগুলো বিযুক্ত রুপার গাথুনি। এক কথায় তার অপূর্ব রূপমাধুর্য বর্ণনাতীত। যে কেউ তাকে প্রথম দর্শনে হতভম্ব হয়ে পড়ত। সে একথা বলতে বাধ্য- জীবনে এমন সুন্দর মানুষ দ্বিতীয়জন দেখিনি।’
নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হবে ঈমান অবস্থায়। পূর্ণ ইসলাম পরিপালনকারী ও সুন্নতের অনুসারীরাই কেবল তাকে দেখতে পাবেন। এ ছাড়া কেউ নবী করিম (সা.) কে দেখার দাবী করলে সেটা মিথ্যা দাবী হবে।
মনে রাখতে হবে, যে যাকে ভালোবাসে, তার সঙ্গ লাভে নিজেকে ধন্য মনে করে। তার চালচলন, ভাবভঙ্গি ও বচনাচার অনুকরণ করে। সে নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখে। সবসময় তার সাক্ষাতের প্রতীক্ষায় থাকে। এভাবেই যুগে যুগে হাজারো নবীপ্রেমিক নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন।
তাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন- ইমাম আবু হানিফা, আবদুর রহমান জামি, জালালুদ্দীন রুমি, শেখ সাদি, সাদুদ্দীন তাফতাজানি। হজরত শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি, আবদুল আজিজ, শায়খ জাকারিয়াসহ অসংখ্য নবীপ্রেমিক (রহ.)। বর্ণিত আছে, ইমাম মালেক (রহ.) অধিকাংশ রাতেই নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতেন।
নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হলে করণীয় হলো- সত্যিকারের নবী প্রেমে মাতোয়ারা হওয়া, তার সুন্নতসমূহ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে উদ্গ্রীব হওয়া। তাহলেই কেবল নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব।
কোনো কোনো আলেম বলেছেন, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হলে, বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। অজুসহকারে পবিত্র হয়ে বিছানায় শয়ন করা। শেষ রাতে উঠে তওবা করা।
তবে সর্বাগ্রে যেটা মনে রাখা দরকার সেটা হলো- ফরজ ইবাদদ তার হকসহ পরিপূর্ণভাবে পালন করেই তবে নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করা।
দুরূদের ফযীলত সম্পর্কিত হাদীস।
নবীজীকে স্বপ্নে দেখার প্রথম আমল অধিক পরিমাণ দুরূদ পড়া
মুসনাদে আহমদে উল্লেখ আছে, সাহাবী হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাযি. বলেন, একদা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকালয় থেকে দূরে এক খেজুর বাগানে প্রবেশ করলেন। সেখানে প্রবেশ করেই তিনি সিজদায় পড়ে গেলেন। তাঁর সাথে কথা বলার জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম। এতো দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, অপেক্ষা করতে করতে আমি প্রায় ধৈর্যহারা হয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, আল্লাহ না করুন, না জানি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইহলোক ত্যাগ করেছেন। এভাবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর একপর্যায়ে তিনি সিজদা থেকে মাথা তুললেন। তাঁর চেহারা মুবারকের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, তিনি অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে আছেন। এরপর নিতান্ত হাস্যোজ্জল চেহারায় আমার দিকে দৃষ্টি করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আমি এমন একটি দৃশ্য অবলোকন করেছি, যা এর আগে কখনো দেখিনি। আমি তো এ ধারণাও করেছিলাম, আপনার ইন্তিকাল হয়ে গেল কী না? হে আল্লাহর রাসূল! মেহেরবানি করে এর কারণ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এই মাত্র) হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন, মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আমি (আল্লাহ) তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবো। আর যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম পাঠ করবে, আমি (আল্লাহ) তার উপর শান্তি বর্ষণ করবো।” আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এ সুসংবাদ ও উপহার প্রাপ্তির শুকরিয়া স্বরূপ আমি দীর্ঘ সিজদা করেছি।
(মুসনাদ আহমদ: ১/১১৯)
দরুদ শরীফের ফায়দা: ফজিলত
আলোচ্য ঘটনার সমর্থনে ইমাম যুহরী রহ. একটি হাদীসও উদ্ধৃতি নকল করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
اِنِّىْ لَقِيْتُ جِبْرَئِيْلَ, فَبَشَّرَنِىْ, فَقَالَ قَالَ اللهُ تَعَالٰى : مَنْ صَلّٰى عَلَيْكَ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ وَمَنْ سَلَّمَ عَلَيْكَ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَسَجَدْتُ لِلّٰهِ شُكْرًا –
অর্থ : একদা হযরত জিবরাঈল আ. এর সাথে আমার সাক্ষাত হলো। অতঃপর তিনি এই বলে আমাকে সু-সংবাদ প্রদান করলেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, (হে নবী!) আপনার উপর কেউ দুরূদ পাঠ করলে, আমি তাঁর উপর রহমত নাযিল করবো। কেউ আপনার উপর সালাম পাঠ করলে, আমিও তাঁর প্রতি সালাম (শান্তি) প্রেরণ করবো।
দুরূদের ফযীলত সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস
ফেরেশতাগণ আমাদের দুরূদ ও সালাম নবীজীর কাছে পৌঁছে দেন
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً سَيَّاحِينَ فِي الْأَرْضِ يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلَامَ
অর্থ: হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার এমন কিছু ফেরেশতা রয়েছেন যারা পৃথিবীতে বিচরণ করেন। আমার উম্মতের (কেউ দুরূদ ও সালাম পাঠ করলে সে) দুরূদ ও সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেন।
(সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং-১২৮২, মিশকাত-৮৬)
ফায়দা-১
‘তারগীব’ নামক গ্রন্থে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রাযি. সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা আমার রওজা আতহারের নিকট একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন, যাকে সমস্ত সৃষ্টিজীবের কথাবার্তা শ্রবণের শক্তি প্রদান করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের কেউ আমার উপর দুরূদ পাঠ করলে সে ফেরেশতা তাৎক্ষণিক আমার কাছে পৌঁছে দেয়, অমুকের পুত্র অমুক আপনার উপর দুরূদ প্রেরণ করেছেন।
(ফাত্হুল মারাম ও ফাযায়েলে দুরূদ)
একবার দুরূদ পাঠ করলে দশটি রহমত নাযিল হয়
عَنْ اَنَسٍ بْنُ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيئَاتٍ، وَرُفِعَتْ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ
অর্থ: হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। এছাড়া তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় ও দশটি মর্তবা বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
(সুনানে নাসাঈ হাদীস নং-১২৯৬, ১২৯৭, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত-৮৬)
ফায়দা
‘যাদুস্ সাঈদ’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ আছে, কিয়ামতের দিন জনৈক মুমিনের নেকআমলে ঘাটতি হবে। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট এক টুকরা কাগজ তার নেকীর পাল্লায় রেখে দিবেন। ফলে তার নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। তখন মুমিন ব্যক্তি বলবেন, আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান হোক! আপনি এ বিপদের মুহূর্তে আমাকে সাহায্য করলেন, আপনার পরিচয় জানতে পারি কী? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন, আমি তোমার নবী আর এটি তোমার দুরূদ পাঠের পুরস্কার।
বেশি বেশি দুরূদ পাঠকারী নবীজীর নিকট সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اِنَّ اَوْلَى النَّاسِ بِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَكْثَرُهُمْ عَلَىَّ صَلَواةً –
অর্থ: হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: নিশ্চয় কিয়ামতের দিন সে-ই আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে যে আমার উপর অত্যধিক পরিমাণ দুরূদ পাঠ করে।
(তিরমিযী হাদীস নং-৪৮৪, ইবনে হিব্বান মিশকাত -৮৬)
ফায়দা-১
ইমাম সাখাবী রহ. قُوْتُ الْقُلُوْبِ কিতাবে উল্লেখ করেন, বেশি বেশি দুরূদ পাঠের অর্থ হচ্ছে, দৈনিক কমপক্ষে তিনশ’ বার দুরূদ পাঠ করা। শায়েখ রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. তাঁর মুরীদ, খাদেম ও অনুসারীদেরকে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনশ’ বার দুরূদ পাঠের নির্দেশ দিতেন।
ফায়দা-৩
‘যাদুস্ সাঈদ’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর লিখিতভাবে অর্থাৎ, কোনো কিতাব লিখে দুরূদ প্রেরণ করে, ফেরেশতাগণ তাঁর প্রতি সর্বদা দুরূদ (রহমত) পড়তে থাকবে যতদিন আমার (রাসূলের) নাম সে কিতাবে অবশিষ্ট থাকবে। ইমাম মুস্তাগফিরী রহ. আরেকটি হাদীস নকল করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দৈনিক একশ’ বার আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে তার একশ’টি হাজাত পূরণ করা হবে। এর মধ্যে ত্রিশটি দুনিয়াতে ও অবশিষ্ট সত্তরটি পরকালে।
(ফাতহুল মারাম)
রওজার পাশে দাঁড়িয়ে দুরূদ পড়লে নবীজী তা শুনতে পান
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى عَلَىَّ عِنْدَ قَبْرِىْ سَمِعْتُهٗ وَمَنْ صَلّٰى عَلَىَّ نَائِيًا اُبْلِغْتُهٗ –
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি আমার রওজার পাশে এসে দুরূদ পাঠ করে আমি তা শুনতে পাই। আর যে ব্যক্তি দূর থেকে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে তা আমার নিকটে পৌঁছে দেয়া হয়।
(মুসনাদে বায্ায, হাদীস নং-১৪২৫, মুসনাদে আবূ ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫, বায়হাকী, মিশকাত-৮৭)
ফায়দা-১ :
আল্লামা ইমাম সাখাবী রহ. ‘কওলে বাদী’ নামক গ্রন্থে হযরত সুলায়মান ইবনে সাহীম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম,‘হে আল্লাহ রাসূল! যারা আপনার রওযা আতহারের কাছে এসে সালাম করেন, তাদের সালাম কী আপনি শুনতে পান, বুঝতে পারেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি শুনতে পাই এবং বুঝতে পারি। অধিকন্তু তাঁদের সালামের উত্তরও দিয়ে থাকি।
(কওলে বাদী)
ফায়দা-২ :
হযরত ইবরাহীম ইবনে শাইবান রহ. বলেন, একদা আমি হজ্জের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযায়ে আতহার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনায় হাজির হলাম। এরপর রওজা পাকের কাছে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করলাম। তখন রওযা শরীফ থেকে وَعَلَيْكَ السَّلَامُ এ শুনতে পেলাম।
(ফাতহুল মারাম)
দুরূদ পাঠকারীর জন্য আসমান-জমীনের সবকিছু দুআ করে
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ عَبْدٍ صَلّٰى عَلَىَّ اِلَّا خَرَجَتِ الصَّلوٰةُ مِن ْفِيْهِ مُسْرِعَةً فَلَا يَبْقٰى بَرٌّ وَلَا بَحْرٌ وَلَا شَرْقٌ وَلَا غَرْبٌ اِلَّا تَمُرُّبِه وَتَقُوْلُ اَنَا صَلٰوةُ فُلَانِ بْنِ فُلَانٍ صَلّٰى عَلَىَّ مُحَمَّدِنِ الْمُخْتَارِ خَلْقِ اللهِ فَلَا يَبْقٰى شَىْءْ ٌاِلَّا صَلّٰى عَلَيْهِ
অর্থ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো বান্দা আমার উপর দুরূদ পাঠ করে, তার মুখ থেকে দরূদের শব্দগুলো বের হওয়ার সাথে সাথেই সে দুরূদ জল-স্থল ও পূর্ব-পশ্চিম সর্বত্র ছুটাছুটি করে। অধিকন্তু বলে, আমি অমুকের পুত্র অমুকের দুরূদ, যা আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিসেরা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর পাঠ করেছে। একথা শুনে দুনিয়ার সবকিছু তাঁর জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকে।
(আল্লামা জমীরুদ্দীন রহ. কর্তৃক রচিত-‘ওয়াযে বে-নজীর’)
দুরূদ পাঠ না করলে কোনো দুআই আসমানের উপর ওঠে না
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اِنَّ الدُّعَآءَ مَوْقُوْفٌ بَيْنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ لَا يُصْعَدُ مِنْهَا شَىْءٌ حَتّٰى تُصَلِّىَ عَلٰى نَبِيِّكَ –
অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: নিশ্চয় সকল দুআ আসমান ও যমীনের মাঝখানে (শূন্যে) অবস্থান করে (ঝুলে থাকে), যতক্ষণ না তোমার নবীর উপর দুরূদ পাঠ করা হয় ততক্ষণ তা উপরে ওঠে না।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৪৮৬, মিশকাত-৮৭)
ফায়দা-১ :
আলোচ্য হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, আমাদের দোয়াসমূহকে দরূদের উপর মওকুফ করা হয়েছে, অর্থাৎ, দুরূদ পাঠ ব্যতীত কারো দোয়াই কবুল হবে না। আল্লামা আবূ সুলায়মান দারানী রহ. বলেন, যখন তুমি আল্লাহর নিকট কোনো দোয়া করার ইচ্ছা কর তখন দোয়ার পূর্বাপর অবশ্যই দুরূদ পাঠ করে নিবে। কেননা, আশা করা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা যখন দু’ পার্শ্বস্থ দুরূদ কবুল করবেন তখন মধ্যবর্তী অংশও (তোমার দোয়া) কবুল করে নিবেন।
(মাযাহেরে হক, মিরকাত)
ফায়দা-২ :
ইমাম সাখাবী রহ. হযরত ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমরা তোমাদের মজলিসসমূহকে অত্যধিক দুরূদ পাঠের দ্বারা সজ্জিত ও সমৃদ্ধ করো। আমার উপর পঠিত দুরূদ কিয়ামতের দিন তোমাদের জন্য নূর হবে।
(ফাযায়েলে দুরূদ)
জুমুয়ার দিন ১০০বার দুরূদ পড়লে নূর তৈরী হয়
عَنْ عَلِىِّ بْنِ اَبِىْ طَالِبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ مِائَةَ مَرَّةٍ جَآءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَعَهٗ نُوْرٌ لَوْ قُسِمَ ذَالِكَ النُّوْرُ بَيْنَ الْخَلْقِ كُلِّهِمْ لَوَسِعَهُمْ –
অর্থ: হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি জুমুয়ার দিন আমার উপর একশ’ বার দুরূদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে একটি নূর সাথে নিয়ে উঠবে যা সমগ্র সমগ্র সৃষ্টিজগতের মাঝে বিতরণ করা হলেও সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।
(দালায়িলুল খয়রাত)
সকাল-সন্ধ্যায় ১০বার দুরূদ পাঠ করলে নবীজীর শাফায়াত নসীব হবে
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ عَشْرًا فِىْ اَوَّلِ النَّهَارِ وَعَشْرًا فِىْ اٰخِرِ النَّهَارِ نَالَتْهُ شَفَاعَتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ –
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকাল-সন্ধ্যায় আমার উপর ১০বার দুরূদ পাঠ করবে, কিয়ামত দিবসে আমার শাফায়াত তার কাছে পৌঁছবে অর্থাৎ, আমি অবশ্যই তাকে সুপারিশ করবো।
(আল্লামা যমীরুদ্দীন কর্তৃক রচিত ‘ওয়াযে বে-নযীর’)
যে নবীজীর নাম শুনে দুরূদ পড়ে না সে সবচেয়ে বড় কৃপণ
عَنْ عَلِىٍّ بن أبي طالب رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اَلْبَخِيْلُ الَّذِىْ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَىَّ –
অর্থ: হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: (সর্বাধিক) কৃপণ হচ্ছে সে ব্যক্তি যার নিকট আমার নাম উচ্চারিত হওয়ার পরেও সে আমার প্রতি দুরূদ পাঠ করেনি।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৫৪৬, মিশকাত : ৮৭)
ফায়দা-১
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: কিয়ামতের দিন যে ব্যক্তি আমার সাক্ষাত পাবে না সে ধ্বংস হোক! জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে সে? তিনি বললেন, কৃপণ। হযরত আয়েশা রাযি. বললেন, কোন্ সে কৃপণ? তিনি বললেন, যে আমার নাম শুনেও দুরূদ পাঠ করে না।
(সুনানে তিরমিযী, ফাযায়েলে দুরূদ)
ফায়দা-২
যদি একই মজলিসে একাধিকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উচ্চারিত হয়, তাহলে ইমাম তাহাবীর মতে (উচ্চারণকারী ও শ্রবণকারী সকলের উপর) প্রতিবার দুরূদ পাঠ করা ওয়াজিব। তবে এর উপর ফতোয়া নয়; বরং ফতোয়া হচ্ছে, একই মজলিসে একাধিকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উচ্চারিত হলেও একবার দুরূদ পাঠ করা ওয়াজিব, আর প্রতিবার পড়া মুস্তাহাব।
(যাদুস্ সাঈদ)
দুরূদ শরীফ পাঠ করলে কঠিন মুসীবত দূর হয়ে যায়
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ عَسُرَتْ عَلَيْهِ حَاجَةٌ فَلْيُكْثِرْ بِالصَّلٰوةِ عَلَىَّ فَاِنَّهَا تَكْشِفُ الْهُمُوْمَ وَالْغُمُوْمَ وَالْكُرُوْبَ وَتُكَثِّرُ الْاَرْزَاقَ وَتَقْضِىْ الْحَوَائِجَ
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যার উপর কঠিন মুসীবত চেপে বসে, তার উচিত অত্যধিক পরিমাণ দুরূদ পাঠ করা। কেননা, তা (অত্যধিক দুরূদ পাঠ) দুঃখ-কষ্ট, দুঃচিন্তা-পেরেশানী ও বিপদাপদ দূর করে ও রিযিক বৃদ্ধি করে এবং সকল প্রকার প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়।
(দালায়িলুল খায়রাত)
সকাল-সন্ধ্যায় ১০বার করে দুরূদ পড়ার ফযীলত
عَنْ اَبِىْ الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ حِيْنَ يُصْبِحُ عَشْرًا وَحِيْنَ يُمْسِىْ عَشْرًا اَدْرَكَتْهٗ شَفَاعَتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ –
অর্থ: হযরত আবূ দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকালে ও বিকালে আমার উপর ১০বার করে দুরূদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত তার কাছে পৌঁছবে অর্থাৎ, আমি অবশ্যই তার জন্য সুপারিশ করব।
(তাবারানী, মাজমা-১০/১৬৩)
যে ব্যক্তি নবীজীর উপর দুরূদ পড়ে না তার উপর লা’নত
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَغِمَ اَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهٗ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَىَّ , وَرَغِمَ اَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ اَنْ يُغْفَرَلَهٗ , وَرَغِمَ اَنْفُ رَجُلٍ اَدْرَكَ عِنْدَهٗ اَبَوَاهُ الْكِبَرَ اَوْ اَحَدَهُمَا فَلَمْ يُدْخِلَاهُ الْجَنَّةَ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হওয়ার পরেও সে আমার প্রতি দুরূদ পাঠ করে না। ধ্বংস হোক সে ব্যক্তিও যার কাছে মাহে রমযান মাস উপস্থিত হওয়ার পরেও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি (অর্থাৎ, মাহে রমযান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না)। ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যার কাছে তার পিতা-মাতা অথবা দু’জনের একজন বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পরও (তাদের খেদমত করে) নিজেকে জান্নাতের উপযোগী বানাতে পারেনি।
(তিরমিযী, হাদীস নং-৩৫৪৫, মিশকাত-৮০)
ফায়দা :
হযরত কা’ব ইবনে উজরা রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা মিম্বরের নিকটবর্তী হও। আমরা নিকটবর্তী হলাম। এরপর তিনি মিম্বরের তিনটি সিড়িতে পা রেখে তিনবার আমীন বললেন। আমরা কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এই মাত্র হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এসে আমাকে বলেছেন...। এরপর আলোচ্য হাদীসটি বর্ণনা করেন। যে কোনো মজলিসে বসে দুরূদ পাঠ করতে হবে
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُواللهَ تَعَالَى فِيْهِ وَلَمْ يُصَلُّوْا عَلٰى نَبِيِّهِمْ, اِلَّا كَانَ عَلَيْهِمْ مِنَ اللهِ تَرِةٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ –
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: কোনো সম্প্রদায় যখন কোনো মজলিসে বসে, আর সেখানে তারা আল্লাহ তায়ালার যিকির ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কোনো দুরূদ পাঠ করে না। কিয়ামত দিবসে এ মজলিস তাদের জন্য বিপদের কারণ হবে।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৩৮০)
নবী-রাসূলগণ মরে না, বরং তাঁরা জীবিত
عَنْ اَبِىْ الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اَكْثِرُوْا مِنَ الصَّلٰوةِ عَلَىَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَاِنَّهٗ يَوْمٌ مَّشْهُوْدٌ تَشْهَدُهُ الْمَلَائِكَةُ وَاِنَّ اَحَدًا لَنْ يُّصَلِّىَ عَلَىَّ اِلَّا عُرِضَتْ عَلَىَّ صَلَواتُهٗ حَتّٰى يَفْرَغَ مِنْهَا , قَالَ قُلْتُ وَبَعْدَ الْمَوْتِ ؟ قَالَ اِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَى الْاَرْضِ اَنْ تَأْكُلَ اَجْسَادَ الْاَنْبِيَآءِ عَلَيْهِمُ الصَّلٰواةُ وَالسَّلَامُ –
অর্থ: হযরত আবূ দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমরা জুমুআর দিন আমার উপর বেশী বেশী দুরূদ শরীফ পাঠ করো। জুমুয়ার দিন ফেরেশতাদের একত্রিত হওয়ার দিন। যে ব্যক্তি জুমুআর দিন আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে ফেরেশতাগণ তাৎক্ষণিক সে দুরূদ আমার নিকট পৌঁছে দিবেন। রাবী হযরত আবূ দারদা রাযি. বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার ইন্তিকালের পরেও কী এমন হবে? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলগণের শরীর ভক্ষণ মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
(আবূ দাউদ, হাদীস নং-১৫৩৩, ইবনে মাজাহ)
ফায়দা-১
“নবী-রাসূলগণের শরীর মাটি ভক্ষণ করতে পারে না” আলোচ্য হাদীসের এ অংশ দ্বারা পরিস্কার প্রতীয়মান হয় যে, নবী-রাসূলগণ কখনো মরেন না; বরং তাঁরা সদা জীবিত। তাঁরা কেবল স্থানান্তরিত হন। আরেক রেওয়ায়াতে উল্লেখ আছে, নবী-রাসূলগণ প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে রিযিক প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
ফায়দা-২
হযরত আওস রাযি. বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সপ্তাহের মধ্যে জুমুয়ার দিন সর্বোত্তম। কেননা-
১. এ দিনে হযরত আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয়েছে।
২. এ দিনে হযরত আদম আ. ইন্তিকাল করেন।
৩. এ দিনে প্রথম সিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে।
৪. এ দিনেই দ্বিতীয়বার সিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে।
অতএব, তোমরা জুমুআর দিন বেশি বেশি দুরূদ পাঠ করো।
(ফাযায়েলে দুরূদ)
জুমুয়ার দিন এ দুরূদটি ৮০বার পড়লে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اَلصَّلٰوةُ عَلَىَّ نُوْرٌ عَلَى الصِّرَاطِ , وَمَنْ صَلّٰى عَلَىَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ثَمَانِيْنَ مَرَّةً غُفِرَتْ لَهٗ ذُنُوْبُ ثَمَانِيْنَ عَامًا
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: আমার উপর দুরূদ পাঠকারীর জন্য পুলসিরাতে নূর হবে। যে ব্যক্তি জুমুআর দিন আমার উপর ৮০বার দুরূদ পাঠ করবে, তার ৮০বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
(তাবরানী, হাদীস নং-২১৪৯)
ফায়দা :
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি জুমুআর দিন আসরের নামাযের পর (সে স্থান থেকে উঠার পূর্বে) নামাযের স্থানে বসে ৮০বার এ দুরূদটি-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدِنِ النَّبِىِّ الْأُمِّىِّ وَعَلٰى اٰلِه وَسَلِّمْ تَسْلِيْمًا –
পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে ও তাঁর আমলনামায় ৮০ বছরের সওয়াব লেখা হবে।
(ফাযায়েলে দুরূদ)
জুমুয়ার দিন বিশেষ মুহূর্তে দুআ কবুল হয়
عَنْ أَبىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَالَ: فِيْهِ سَاعَةٌ، لاَ يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّىْ، يَسْأَلُ اللهَ تَعَالٰى شَيْئًا اِلَّا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ, وَأَشَارَ بِيَدِه يُقَلِّلُهَا
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জুমুআর খুতবায় বললেন, এ দিনে একটি মুহূর্ত রয়েছে, এ সময় কোন মুসলমান সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাই দিবেন। এ বলে তিনি হাতের ইশারা করে বুঝালেন, সে মুহূর্তটি অতি সংক্ষিপ্ত।
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম, বু. হাদীস নং-৮৮৮)
ফায়দা :
জুমুয়ার দিন একটি সময় আছে, বান্দা আল্লাহর কাছে ওই সময় যে দুআ করবে, আল্লাহ তাআলা সে দুআই কবুল করবেন। কিন্তু সময়টি কখন হাদীসে সেটা পরিস্কারভাবে বলা হয়নি। হাদীসে এ বিষয়টি গোপন রাখার রহস্য হলো, যাতে মানুষ দুআ কবুলের আশায় জুমুআর পুরো দিনটিই ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকে। অবশ্য দুআ কবুলের সে সময়টি সম্পর্কে হাদীস বিশারদগণ একাধিক মত প্রকাশ করেছেন। যেমন-
০১. জুমুয়ার দিন সুবহে সাদিকের সময় দোয়া কবুল হয়।
০২. জুমুয়ার দিন ফজরের আযানের সময় দোয়া কবুল হয়।
০৩. জুমুয়ার দিন সূর্যোদয়ের সময় দোয়া কবুল হয়।
০৪. জুমুয়ার দিন সূর্য পূর্ণরূপে উদিত হওয়ার পরবর্তী মুহূর্তে দোয়া কবুল হয়।
০৫. জুমুয়ার দিন ঠিক সূর্য ঢলার সময় দোয়া কবুল হয়।
০৬. জুমুয়ার দিন সূর্য ঢলার পর ছায়া অর্ধহাত হওয়া পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়।
০৭. জুমুয়ার দিন সূর্য ঢলে পড়ার পর ছায়া একহাত হওয়া পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়।
০৮. জুমুয়ার দিন মুয়ায্যিন জুমুয়ার আযান দেয়ার সময় দোয়া কবুল হয়।
০৯. জুমুয়ার দিন সূর্য ঢলার সময় থেকে জুমুয়ার নামায়ে দাখিল হওয়া পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়।
১০. জুমুয়ার দিন সূর্য ঢলার সময় থেকে ইমাম সাহেব নামায় থেকে অবসর হওয়া পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়।
১১. জুমুয়ার দিন ইমাম সাহেব মিম্বরে আসীন হওয়ার পর থেকে নামাযে দাঁড়ানো পর্যন্ত দোয়া কবুল হয় ।
১২. জুমুয়ার দিন ইমাম সাহেব মিম্বরে ওঠার পর থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়।
১৩. জুমুয়ার দিন ইমাম সাহেব খুতবা পাঠকালীন দোয়া কবুল হয়।
১৪. জুমুয়ার দিন দু’ খুতবার মাঝে দোয়া কবুল হয়।
১৫. জুমুয়ার দিন ইমাম সাহেব মিম্বর থেকে নামার সময় দোয়া কবুল হয়।
১৬. জুমুয়ার দিন মুয়াযযিন ইকামাত বলার সময় দোয়া কবুল হয়।
১৭. জুমুয়ার দিন ইকামাত ও নামাযের মাঝে দোয়া কবুল হয়।
১৮. জুমুয়ার নামায শেষ হওয়ার সাথে সাথে দোয়া কবুল হয়।
১৯. জুমুয়ার দিন আসরের নামাযের সময় দোয়া কবুল হয়।
২২. জুমুয়ার দিন আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়।
২১. জুমুয়ার দিন সূর্যাস্তের সময় দোয়া কবুল হয়।
বিঃ দ্রঃ জুমুয়ার দিন যে কোনো সময় দোয়া কবুল হতে পারে। তাই সময় নির্দিষ্ট না করে পুরো দিন দুআ-দুরূদ ও ইস্তিগফারে কাটিয়ে দেয়া উচিত। উল্লেখ্য, কেবল জায়নামায়ে বসেই দোয়া করতে হবে এমনটি জরুরী নয়; বরং হাটতে-চলতে, শুয়ে-বসে সর্বাবস্থায়ই দোয়া-দুরূদ পাঠ করা যায়।
(-সংকলক)
বেশি বেশি দুরূদ পাঠের নির্দেশ
عَنْ اُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ : قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ! اِنِّىْ اُكْثِرُ الصَّلَاةَ عَلَيْكَ فَكَمْ اَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلَاتِىْ فَقَالَ مَاشِئْتَ قُلْتُ الرُّبُعُ قاَلَ مَاشِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ, قُلْتُ النِّصْفُ قَالَ شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ, قُلْتُ الثُّلُثَيْنِ قَالَ مَاشِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ, اَجْعَلُ لَكَ صَلَواتِىْ كُلَّهَا, قَالَ اِذًا تُكْفَى هَمُّكَ وَيُكَفَّرُ لَكَ ذَنْبُكَ –
অর্থ: হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার উপর অত্যধিক দুরূদ পাঠ করতে চাই। কাজেই, (আমার দুআ পড়ার মধ্যে) কী পরিমাণ (দুরূদ) পড়লে যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, তোমার যত ইচ্ছা। আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যত ইচ্ছা, তবে আরো বেশি হলে তোমার জন্য মঙ্গল হবে। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যত ইচ্ছা, তবে যদি আরো বেশি হলে তোমার জন্য মঙ্গল হবে। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দু’ ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যত ইচ্ছা, তবে আরো বেশি হলে তোমার জন্য মঙ্গল হবে। আমি বললাম, তাহলে কী সম্পূর্ণই আপনার জন্য নির্দিষ্ট করবো? তিনি বললেন, তবে এবার তোমার মাকসূদ পূর্ণ হবে ও তোমার গুনাহের কাফ্ফারা হবে।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৪৫৭, মিশকাত : ৮৬)
ফায়দা
মানুষের যে কোনো আমল ও ইবাদতের পরিমাণ নির্ধারিত। যেমন- ফরয নামায দৈনিক পাঁচবার। ফরয রোযা বছরে একবার। ফরয হজ্জ জীবনে একবার। ফরয যাকাত চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। কিন্তু দুরূদ শরীফ এমন একটি আমল যার কোনো পরিমাণ নির্ধারিত নেই; বরং দুরূদ যত বেশি পাঠ করা হবে ততই উত্তম। আলোচ্য হাদীসে এ কথাই বলা হয়েছে।
অধিক দুরূদ পড়লে আল্লাহ আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিবেন
عَنْ اَبِىْ بُرْدَةَ بْنِ اَبِىْ مُوْسٰى عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اَنْزَلَ اللهُ عَلَىَّ اَمَانَيْنِ لِاُمَّتِىْ : وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ : فَاِذَا مَضَيْتُ تَرَكْتُ فِيْهِمُ الْاِسْتِغْفَارَ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
অর্থ: হযরত আবূ বুরদা ইবনে আবূ মূসা তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা আমার উপর আমার উম্মতের জন্য দু’টি নিরাপত্তা অবতীর্ণ (দান) করেছেন; একটি হলো আমার অবস্থান ও দ্বিতীয়টি ইস্তিগফার। এর সমর্থনে তিনি নিম্মোক্ত আয়াত পাঠ করেন-
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَاَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
অর্থ : বস্তুত আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না, যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করছেন। অধিকন্তু ইস্তিগফার করা অবস্থায়ও আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না। অতঃপর আমি (তোমাদের নিরাপত্তার জন্য) কিয়ামত পর্যন্ত ইস্তিগফার রেখে গেলাম।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩০৮২)
ফায়দাঃ
আলোচ্য হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিরাপত্তার জন্য (দ্বিতীয় মাধ্যম হিসাবে) ইস্তিগফার রেখে গেছেন। তবে কেউ কেউ ইস্তিগফার দ্বারা সুন্নাত মুরাদ নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ইস্তিগফার দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন দুরূদ শরীফ। অর্থাৎ, বেশি বেশি দুরূদ পাঠ করলে সকল প্রকার বালা-মুসীবত থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নিরাপত্তা দান করবেন।
এ দুরূদটি পাঠ করলে সাদকার সওয়াব হয়
عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِنِ الْخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ قَالَ : اَيُّمَا رَجُلٍ مُسْلِمٍ لَمْ يَكُنْ عِنْدَهٗ صَدَقَةٌ فَلْيَقُلْ فِىْ دَعَائِه : اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنٰتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمٰتِ : فَاِنَّهَا زَكوٰةٌ , وَقَالَ لَا يَشْبَعُ الْمُؤْمِنُ خَيْرًا حَتّٰى يَكُوْنَ مُنْتَهَاهُ الْجَنَّةُ –
অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যার নিকট সাদকা করার মতো কোনো বস্তু নেই, সে যেন এ দুরূদটি “আল্লাহুম্মা.....................মুসলিমাত” পাঠ করে, কেননা, এ দুরূদ সদকাতুল্য। তিনি আরো বলেন, জান্নাতে পৌঁছার আগ পর্যন্ত মুমিন নেককাজে পরিতৃপ্ত হয় না।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৮৬, ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৯০৩, আল-মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭১৭৫)
দুরূদ পাঠকারীর জন্য জান্নাত অপেক্ষা করছে
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اِنَّ الْجَنَّةَ تَشْتَاقُ اِلٰى خَمْسَةِ نَفَرٍ : تَالِى الْقُرْاٰنِ , وَحَافِظِ اللِّسَانِ , وُمطْعِمِ الْجِيْعَانِ , وَمُكْسِى الْعُرْيَانِ , وَمَنْ صَلّٰى عَلٰى حَبِيْبِ الرَّحْمٰنِ
অর্থ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় জান্নাত পাঁচ প্রকার লোকের জন্য অধীর আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছে। ১. (অত্যধিক) কুরআন তেলাওয়াতকারী, ২. (বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে) মুখ হেফাজতকারী, ৩. ক্ষুধার্তকে অন্নদানকারী, ৪. বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদানকারী ও ৫. আল্লাহ তাআলার প্রিয় হাবীব (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি (অত্যধিক পরিমাণ) দুরূদ পাঠকারী।
(‘ফাযায়েলে দুরূদ’)
নবীজীর শাফায়াত (সুপারিশ) পাবার দুআ
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللّٰهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الوَسِيْلَةَ وَالفَضِيْلَةَ، وَابْعَثْهٗ مَقَامًا مَّحْمُودًا الَّذِىْ وَعَدْتَهٗ، حَلَّتْ لَهٗ شَفَاعَتِىْ يَوْمَ القِيَامَةِ
অর্থ: হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি আযান শুনে এ দুআটি পাঠ করে. اللّٰهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ (হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও সালাতের প্রতিষ্ঠিত মালিক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে মাকামে মাহমূদে পৌঁছিয়ে দিন, যার অঙ্গীকার আপনি করেছেন)। কিয়ামতের দিন সে আমার শাফায়াত লাভ করবে।
(সহীহ বুখারী : হাদীস নং-৫৮৭, ৬১৪)
আযানের পরে দুরূদ শরীফ পড়ার নির্দেশ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّهٗ سَمِعَ النَّبِىَّ -صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- يَقُوْلُ: إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ ثُمَّ صَلُّوْا عَلَىَّ فَإِنَّهٗ مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِى الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِىْ إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَأَرْجُوْ أَنْ أَكُوْنَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِىَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ’স রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাবে, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও অনুরূপ বলবে। এরপর (আযান শেষে একবার) দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশটি রহমত প্রেরণ করেন। তাউপর আমার জন্য ওয়াসীলার দোয়া করো (অর্থাৎ, আযানের দোয়া পাঠ কর)। ওয়াসীলা হলো জান্নাতের একটি বিশেষ একটি স্থান যা আল্লাহর এক বিশেষ বান্দাকে প্রদান করা হবে। আমি আশা করি, আমিই হবো সে বান্দা। যে আমার জন্য অসীলার দোয়া করবে, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭৩৫, ৮৭৫)
একবার দুরূদ পাঠ করলে দশবার রহমত নাযিল হয়
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ وَاحِدَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرًا – অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৩৯)
ফায়দা:
আলোচ্য হাদীসের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যদি কোনো ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর খুশি হয়ে কমপক্ষে দশটি রহমত নাযিল করেন।
রাসূলে কারীম সা. এর নাম শুনলে দুরূদ শরীফ পড়া উচিত :
عَنْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهٗ فَلْيُصَلِّ عَلَىَّ وَمَنْ صَلّٰى عَلَىَّ وَاحِدَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرًا -
অর্থ: হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হয়, তার উচিত আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা। যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে, মহান আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৩৯, সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং-১২২০)
ফায়দা :
আল্লামা মুনযিরী রহ. ‘আত-তারগীব’ গ্রন্থে হযরত বারা ইবনে আযিব রাযি. থেকে উক্ত হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর ১০বার দুরূদ ও রহমত নাযিল করবেন। যে ব্যক্তি আমার উপর ১০বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর ১০০বার দুরূদ ও রহমত নাযিল করবেন। আর যে ব্যক্তি আমার উপর ১০০বার দুরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার নাম মুনাফেকী ও জাহান্নামের দফতর থেকে কর্তন করে দিবেন ও কিয়ামত দিবসে শহীদগণের সাথে তাঁকে উঠাবেন।
(ফাযায়েলে দুরূদ)
দরূদে ইবরাহীমের ফযীলত সবচেয়ে বেশি
عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِىْ لَيْلٰى قَالَ: لَقِيَنِىْ كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ فَقَالَ: أَلاَ أُهْدِىْ لَكَ هَدِيَّةً؟ إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ عَلَيْنَا فَقُلْنَا: يَا رَسُوْلَ اللهِ، قَدْ عَلِمْنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ فَكَيْفَ نُصَلِّىْ عَلَيْكَ؟ قَالَ, فَقُوْلُوْا: اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ: اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
অর্থ: হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবূ লায়লা রাযি. থেকে বর্ণিত, তনি বলেন, একবার আমার সাথে কা’ব ইবনে উজরা রাযি. এর সাক্ষাত হলো। তিনি বললেন, আমি কী তোমাকে একটি হাদিয়া দেবো না? তা হচ্ছে- একদা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে তাশরীফ আনলেন। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে কীভাবে সালাম করব? কীভাবে আপনার প্রতি দুরূদ পড়ব? তিনি বললেন, তোমরা এভাবে দুরূদ পড়বে,
اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ....... .... ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারবর্গের উপর যেমনিভাবে রহমত বর্ষণ করেছিলেন হযরত ইবরাহীম আ. ও তার পরিবারবর্গের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও সর্বাধিক সম্মানের অধিকারী। হে আল্লাহ! আপনি খাস বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারবর্গের উপর যেমন বরকত নাযিল করেছিলেন হযরত ইবরাহীম আ. ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিশ্চয়ই আপনি সর্বাধিক প্রশংসিত ও সম্মানিত।
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৩৭০, ৫৯১৭)
ফায়দা:
বিশুদ্ধ কিতাবসমূহে যেসব দুআ ও দুরূদ বর্ণিত হয়েছে এর মধ্যে আলোচ্য হাদীসে বর্ণিত ‘দরূদে ইবরাহীম’ এর ফযীলত সবচেয়ে উত্তম। উত্তম হওয়ার কারণেই একে নামাযে আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে।
এ দরূদের সওয়াব ৭০জন ফেরেশতা দ্রুত লিখতে থাকেন
عَنِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ: جَزَى اللهُ عَنَّا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا هُوَ اَهْلُه : اَتْعَبُ سَبْعِيْنَ كَاتِبًا اَلْفَ صَبَاحٍ -
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি এ দুরূদটি পাঠ করবে-
جَزَى اللهُ عَنَّا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا هُوَ اَهْلُهُ
(অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন প্রতিদান ও পুরস্কার দান করুন- যা পাওয়ার তিনি যোগ্য) সত্তর জন ফেরেশতা এক হাজার দিন পর্যন্ত (তার আমলনামায়) সওয়াব লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে যায়।
(মাজমাউয যাওয়ায়েদ : হাদীস নং-১৭৩০৫, তাবরানী, আত-তারগীব)
ফায়দা :
হযরত শায়েখ আবূ সুলায়মান দারানী রহ. বলেন, অন্যান্য ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু দুরূদ শরীফ এমন একটি ইবাদত, যা কবুল না হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই; বরং তা অবশ্যই কবুল হয়ে থাকে।
(ফাযায়েলে দুরূদ)
এ দুরূদটি পাঠ করলে তার জন্য নবীজীর শাফায়াত ওয়াজিব
عَنْ رُوَيْفَعِ بْنِ ثَابِتِ الْاَنْصَارِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:مَنْ قَالَ: اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَاٰنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: وَجَبَتْ لَهٗ شَفَاعَتِىْ
অর্থ: হযরত রুয়াইফা’ ইবনে সাবিত আল-আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি এ দুরূদ শরীফটি পাঠ করবে -
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَاَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর রহমত নাযিল করুন। কিয়ামতের দিন তাঁকে এমন মর্যাদা ও সম্মানজনক স্থানে আসীন করুন যা আপনার অতি নিকবর্তী)। তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৯৯৩)
একটি আশ্চর্য ঘটনা
দুরূদ শরীফ পড়ে ফুঁ-দেয়ার কারণে খালি হাতে ‘মুক্তা’ সৃষ্টি হলো
একদা মক্কার কাফির নেতা আবূ জাহল কাবাগৃহের অদূরে বসে বন্ধুদের সাথে গল্প করছিল। ইত্যবসরে এক ভিক্ষুক এসে তাদের নিকট ভিক্ষা চাইল। তারা তখন ঠাট্টা করে বলল, সে কাবার ভিতর আলী (রাযি.) বসে আছে, তুমি তার কাছে গিয়ে ‘আল্লাহর নামে’ ভিক্ষা চাও, সে তোমাকে অনেক কিছু দিবে। (এখানে তাদের উদ্দেশ্য ছিল অপ্রস্তুত অবস্থায় হযরত আলী রাযি. কে ভিক্ষুকের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা)। তাদের কথামত ভিক্ষুক হযরত আলী রাযি. এর নিকট গিয়ে ‘আল্লাহর নামে’ ভিক্ষা প্রার্থনা করলো।
হযরত আলী রাযি. এর নিকট ভিক্ষা দেয়ার মত তেমন কিছুই ছিল না। তাই তিনি ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর একবার ‘দুরূদ শরীফ’ পাঠ করে ভিক্ষুকের খালি হাতে ফুঁ- দিলেন। এরপর তার দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দিয়ে বললেন, যারা তোমাকে পাঠিয়েছে তাদের নিকট গিয়ে তোমার হাত উম্মুক্ত করবে। যখন ভিক্ষুক আবূ জাহেলের নিকট এসে তার হাত উম্মুক্ত করলো, তখন দেখতে পেল তার হাতে অতিমূল্যবান একটি ‘মুক্তা’ (যার মূল্য তৎকালীন বাজারে এক হাজার দিনার স্বর্ণমুদ্রা থেকেও বেশি)। এতে আবূ জাহেলসহ সকলেই বিস্মিত হলো। তারা ভিক্ষুকের কাছে এ ‘মুক্তা’ সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বললো, আলী রাযি. দুরূদ পড়ে আমার হাতে ফুঁ- দিয়েছেন। সম্ভবত: সে দরূদের বরকতেই এটি হয়েছে।
(আল্লামা যমীরুদ্দীন রহ. কর্তৃক রচিত ‘ফাযায়েলে দুরূদ’)
দরূদের বরকতে সহজে পুলসিরাত পার হয়ে গেলেন
হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা রাযি. বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বাইরে তাশরীফ নিয়ে ইরশাদ করলেন, অদ্য রজনীতে আমি একটি আশ্চর্য জিনিস প্রত্যক্ষ করেছি। আমি দেখছি, এক ব্যক্তি পুলসিরাতের উপর দিয়ে কখনো তার পাঁ হেঁচড়ে, কখনো হামাগুড়ি দিয়ে অতিক্রম করছে, আবার কখনো পাঁ একেবারে আটকে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তার নিকট আমার দুরূদ (সম্ভবত কেউ পাঠ করে তার নামে সওয়াব রেসানী করেছিলো) পৌঁছে গেলো ও সে দুরূদ তাকে সোজা দাঁড় করিয়ে দিল। এরপর লোকটি অতি সহজে পুলসিরাত পার হয়ে গেলো।
(তাবরানী, ফাযায়েলে দুরূদ)
- রাসূল সা কে স্বপ্নে দেখার আমল
- প্রিয় নবীকে স্বপ্নে দেখার আমল
- দুরুদ শরীফ বাংলা
- নবীজির দুরুদ শরীফ
- দরুদ শরীফের ফায়দা: ফজিলত
Comments
Post a Comment
Please do not enter any spam link in the comment box. Thanks